(News Source: সাময়িকী)
রবীন্দ্রনাথের গান বাংলা সংগীত তথা বিশ্ব সংগীত সম্ভারের এক অনন্য সম্পদ। তাঁর গানে বাণীর উৎকর্ষ, এর দার্শনিকায়ন, সুরের অভিনবত্ব, বাণী ও সুরের সম্মিলন প্রভৃ তি বিষয় যথেষ্ট আলোচিত। কিন্তু সংগীত বিষয়ে তাঁর ভাবনা নিয়ে আলোচনা তেমন একটা দেখা যায় না। সাধনার দীর্ঘ পরিক্রমায় তিনি সংগীতকে দেখতে চেয়েছেন আপন বৈশিষ্ট্যে, মুক্তি দিয়েছেন নিয়ম-শৃঙ্খলের নাগপাশ ছিঁড়ে। হিন্দুস্থানী সংগীতের বেড়াজাল অতিক্রম করে বাংলা গানের চারিত্র্য নির্ধারণে, সমসাময়িক চিন্তার বাইরে গিয়ে তিনি যে দূরদর্শিতা দেখিয়েছেন, তা প্রমাণ করে, সময়ের চেয়ে তিনি কতটা এগিয়ে ছিলেন। জোড়াসাঁকোর ঠাকু রবাড়ি ছিল সংগীতচর্চার একটি পীঠস্থান। তখনকার দিনের শ্রেষ্ঠ ওস্তাদদের আনাগোনা ছিল এ বাড়ির প্রাঙ্গন। রাগ-রাগিণীর অবচেতন পাঠ নিতে নিতেই শৈশব-কৈশোর অতিক্রম করেছেন রবীন্দ্রনাথ। বাড়িতে নিয়মিত আসর, মেজদাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকু রের সান্নিধ্যে সুরের খেলা উপভোগ, ব্রাহ্ম উপাসনা সংগীত সৃষ্টি প্রভৃতির মাধ্যমে কবির সংগীতমানস পরিপুষ্ট হতে থাকে। কিন্তু প্রথাগতভাবে ওস্তাদের কাছে ’নাড়া’ বেঁধে শিক্ষাগ্রহণ করা তাঁর হয়ে ওঠেনি। তিনি নিজেই বলেছেন, ”সংগীতশিক্ষাটা আমার সংস্কারগত, ধরাবাঁধা রুটিন মাফিক নয়।” সংগীত চিন্তার ক্ষেত্রেও তাঁর প্রথাবিরুদ্ধতা লক্ষ্যণীয়। পূর্বজদের সৃষ্ট রাগ-রাগিণীর রূপরেখার মধ্যেই কেবল তিনি অবগাহন করেননি; কান পেতেছেন সংগীতের হৃদয়ে, ভেবেছেন নতু ন আঙ্গিকে, বিদ্যমান কাঠামো ভেঙেচু ড়ে একাকার করেছেন, সাজিয়েছেন নতু ন বিন্যাসে, উন্মুক্ত করেছেন নতুন দিগন্ত।
রবীন্দ্রনাথ ভাবের প্রতিষ্ঠাকেই সংগীতের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে অভিহিত করেছেন। মানুষ প্রাত্যহিক জীবনে ভাবের বিভিন্নতা প্রকাশের জন্য স্বরের ওঠা-নামাসহ বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন করে। সংগীতের ক্ষেত্রেও ভাবের প্রকৃ তির ওপর ভিত্তি করে সুরবিন্যাস আবশ্যক। তাঁর মতে, ভাবহীন কথা যেমন অর্থহীন; সুরের বেলায়ও তা যতই সুবিন্যস্ত, অলংকারপূর্ণ হোক, ভাব অনুপস্থিত থাকলে তা প্রাণহীন। এ বিষয়ে ’সংগীতচিন্তা’ গ্রন্থের ’সংগীত ও ভাব’ প্রবন্ধে তিনি বলেন, ”গায়কেরা সংগীতকে যে আসন দেন, আমি সংগীতকে তদপেক্ষা উচ্চ আসন দিই; তাহারা সংগীতকে কতগুলি জড় সুরের ওপর স্থাপন করেন, আমি তাহাদেরকে জীবন্ত অমর ভাবের উপর স্থাপন করি।’’ এ প্রসঙ্গে এগোতে গিয়ে তিনি কলাবিদ্যার দুই শাখা কবিতা ও সংগীতের তু লনামূলক অবস্থান তু লে ধরেন। তিনি মনে করেন, কবিতা ও সংগীত সহোদর হওয়া সত্ত্বেও কবিতা ভাবকে প্রাধান্য দেয় বলে উচ্চতর স্থানে অধিষ্ঠিত, আর সংগীতের ক্ষেত্রে ঘটেছে তার উল্টো। ভাবের প্রতিষ্ঠার জন্যই স্বরবিন্যাসের এতো বৈচিত্র, এতো রাগ-রাগিনী। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ওস্তাদদের হাত বেয়ে রাগ-রাগিনীর নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে ওঠে। রাগ-রাগিণীর ন্দ্রনাথের গান বাংলা সংগীত তথা বিশ্ব সংগীত সম্ভারের এক অনন্য সম্পদ। তাঁর গানে
বাণীর উৎকর্ষ, এর দার্শনিকায়ন, সুরের অভিনবত্ব, বাণী ও সুরের সম্মিলন প্রভৃ তি বিষয় যথেষ্ট আলোচিত। কিন্তু সংগীত বিষয়ে তাঁর ভাবনা নিয়ে আলোচনা তেমন একটা দেখা যায় না। সাধনার দীর্ঘ পরিক্রমায় তিনি সংগীতকে দেখতে চেয়েছেন আপন বৈশিষ্ট্যে, মুক্তি
দিয়েছেন নিয়ম-শৃঙ্খলের নাগপাশ ছিঁড়ে। হিন্দুস্থানী সংগীতের বেড়াজাল অতিক্রম করে বাংলা গানের চারিত্র্য নির্ধারণে, সমসাময়িক চিন্তার বাইরে গিয়ে তিনি যে দূরদর্শিতা দেখিয়েছেন, তা প্রমাণ করে, সময়ের চেয়ে তিনি কতটা এগিয়ে ছিলেন। জোড়াসাঁকোর ঠাকু রবাড়ি ছিল সংগীতচর্চার একটি পীঠস্থান। তখনকার দিনের শ্রেষ্ঠ ওস্তাদদের আনাগোনা ছিল এ বাড়ির প্রাঙ্গন। রাগ-রাগিণীর অবচেতন পাঠ নিতে নিতেই শৈশব-কৈশোর অতিক্রম করেছেন রবীন্দ্রনাথ। বাড়িতে নিয়মিত আসর, মেজদাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকু রের সান্নিধ্যে সুরের খেলা উপভোগ, ব্রাহ্ম উপাসনা সংগীত সৃষ্টি প্রভৃ তির মাধ্যমে কবির সংগীতমানস পরিপুষ্ট হতে থাকে। কিন্তু প্রথাগতভাবে ওস্তাদের কাছে ’নাড়া’ বেঁধে শিক্ষাগ্রহণ করা তাঁর হয়ে ওঠেনি। তিনি নিজেই বলেছেন, ”সংগীতশিক্ষাটা আমার সংস্কারগত, ধরাবাঁধা রুটিন মাফিক নয়।” সংগীত চিন্তার ক্ষেত্রেও তাঁর প্রথাবিরুদ্ধতা লক্ষ্যণীয়। পূর্বজদের সৃষ্ট রাগ-রাগিণীর রূপরেখার মধ্যেই কেবল তিনি অবগাহন করেননি; কান পেতেছেন সংগীতের হৃদয়ে, ভেবেছেন নতু ন আঙ্গিকে, বিদ্যমান কাঠামো ভেঙেচু ড়ে একাকার করেছেন, সাজিয়েছেন নতু ন বিন্যাসে, উন্মুক্ত করেছেন নতুন দিগন্ত। রবীন্দ্রনাথ ভাবের প্রতিষ্ঠাকেই সংগীতের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে অভিহিত করেছেন। মানুষ প্রাত্যহিক জীবনে ভাবের বিভিন্নতা প্রকাশের জন্য স্বরের ওঠা-নামাসহ বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন করে। সংগীতের ক্ষেত্রেও ভাবের প্রকৃ তির ওপর ভিত্তি করে সুরবিন্যাস আবশ্যক। তাঁর মতে, ভাবহীন কথা যেমন অর্থহীন; সুরের বেলায়ও তা যতই সুবিন্যস্ত, অলংকারপূর্ণ হোক, ভাব অনুপস্থিত থাকলে তা প্রাণহীন। এ বিষয়ে ’সংগীতচিন্তা’ গ্রন্থের ’সংগীত ও ভাব’ প্রবন্ধে তিনি বলেন, ”গায়কেরা সংগীতকে যে আসন দেন, আমি সংগীতকে তদপেক্ষা উচ্চ আসন দিই; তাহারা সংগীতকে কতগুলি জড় সুরের ওপর স্থাপন করেন, আমি তাহাদেরকে জীবন্ত অমর ভাবের উপর স্থাপন করি।’’ এ প্রসঙ্গে এগোতে গিয়ে তিনি কলাবিদ্যার দুই শাখা কবিতা ও সংগীতের তু লনামূলক অবস্থান তু লে ধরেন। তিনি মনে করেন, কবিতা ও সংগীত সহোদর হওয়া সত্ত্বেও কবিতা ভাবকে প্রাধান্য দেয় বলে উচ্চতর স্থানে অধিষ্ঠিত, আর সংগীতের ক্ষেত্রে ঘটেছে তার উল্টো। ভাবের প্রতিষ্ঠার জন্যই স্বরবিন্যাসের এতো বৈচিত্র, এতো রাগ-রাগিনী। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ওস্তাদদের হাত বেয়ে রাগ-রাগিনীর নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে ওঠে। রাগ-রাগিণীর