ডাকযোগে ভূমিসেবা: সরকারের জনবান্ধব নীতির সফল বাস্তবায়ন
ডাক বিভাগ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও আদি সেবা ধর্মী সরকারি প্রতিষ্ঠান। এটি জনসাধারণকে নানাবিধ আর্থিক ও অনার্থিক সেবা প্রদান করে থাকে। গ্রামীণ জনপদ থেকে শুরু করে নগর অবদি যে প্রতিষ্ঠানটি সর্বাধিক মানুষকে যুগ যুগ ধরে প্রত্যাশিত সরকারি সেবা প্রদান করে অসছে, সেটি বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। সরকারি যে কোনো সেবা অতি দ্রুত তৃণমূল পর্যন্ত একমাত্র ডাক বিভাগই পৌঁছে দিতে সক্ষম। কেননা ডাক বিভাগের রয়েছে সুবিন্যাস্ত বিশাল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক। ডাক বিভাগের বিদ্যমান সক্ষমতা অনুধাবন করে সদাশয় সরকার নাগরিকের দোর গোড়ায় ভূমিসেবা পৌঁছেদিতে “ডাকযোগে ভূমিসেবা” নামীয় নতুন সেবার প্রবর্তনকরেছেন।
বর্তমান সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি জনবান্ধব নীতি হচ্ছে, “ ডাক বিভাগ সরকারের সকল দপ্তরের ফিজিক্যাল সার্ভিস নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিবে”। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষে ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয় ও ডাক বিভাগের যৌথ উদ্যোগে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে “ডাকযোগে ভূমিসেবা” চালু করা হয়। পোস্টাল প্রিন্টিং প্রেস হতে তৈরিকৃত বিশেষ খামে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নাগরিকের মালিকানাধীন জমির পর্চা, ম্যাপ তাঁদের নিজ নিজ ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ফলস্বরূপ গ্রাহক সাধারণের ভূমিসেবা পেতে পূর্বের তুলনায় সময়, অর্থ ও যাতায়াত সহনীয় পর্যায়ে চলেআসছে এবং একই সাথে সেবা সহজীকরণের কারনে গ্রহকসেবা কাঙ্খিত মত্রায় উন্নাতি হয়েছে।
জেলা ভূমি রেকর্ড রুম হতে সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিসের নির্ধারিত লেটার রাইটার ডাকযোগে প্রেরিতব্য পর্চা সংগ্রহ করে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে প্রাপকের ঠিকানায় প্রেরন করেন এবং পোস্ট ম্যান দ্রুততম সময়ে বিলি করেন। বিলির তথ্য নির্ধারিত সফটওয়্যারে আপলোড করা হয়।
জেলা ভুমি রেকর্ড রুম এবং ডাক বিভাগের মধ্যকার কার্যসম্পাদনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সফটওয়্যারে যে ধাপসমূহ সম্পন্নহয়, তা হলোঃ
১. জেলা ভুমি রেকড রুম আবেদনকৃত পর্চার/ জমির ম্যাপের সংখ্যা গণনা করে সফটওয়্যারে প্যানেলে ইনপুট দেওয়া হয়।
২. প্রতি কার্যদিবসের শেষে অফিস কাউন্টার এবং ডাকযোগে প্রেরণের জন্য আবেদন গণনা করা হয়।
৩. ডাকযোগে প্রেরণের জন্য প্রস্তুতকৃত আবেদনের তথ্য প্যানেলে ইনপুট দেওয়া হয়।
৪. রেকর্ড রুম প্যানেল হতে দিনে একবার সকল লেটার রাইটারের প্যানেলে মোট প্রস্তুতকৃত আবেদনের সংখ্যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রেরণ করা হয়।
৫. পরবর্তী কার্য দিবসে লেটার রাইটার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কাউন্টার হতে প্রস্তুতকৃত আবেদনের খতিয়ান সংগ্রহ করেন।
৬. ডাক যোগে ইস্যু হবার পর লেটার রাইটার প্যানেলে সেইতথ্য আপডেট করেন।
গত ২৯ মার্চ ২০২৩ তারিখে ’ডাকযোগে ভূমি সেবা’ বিষয়কআলোচনা অনুষ্ঠানে সাবেক ভূমি সচিব মহোদয় বলেন, “আমাদের ফিজিক্যাল সার্ভিসগুলোর জন্য পোস্ট অফিসের সাথে আমরা এমওইউভুক্ত। আমাদের সমস্ত ল্যান্ড সার্ভিস পোস্ট অফিস দায়িত্ব নিয়েছে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিবে। রেজিস্ট্রি ডাকযোগে তারা পৌঁছে দিচ্ছে। অনলাইন কলসেন্টারে ফোন করে আবেদন করতে পারবেন। সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে ডাকযোগে গ্রাহকের বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে। প্রায় তিন লক্ষের অধিক পর্চা পোস্ট অফিস ডেলিভারি করেছে আলাদা এনভেলাপে করে। এই সবকিছুই করা হয়েছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায়, তাঁর একটাই টার্গেট ছিল– জনগণের ভোগান্তি কমানো”।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ”জাতীয় ভূমি সম্মেলন ২০২৩” অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ডাকবিভাগ এখন নাগরিকের ঠিকানায় খতিয়ান ও ম্যাপ পৌঁছেদিচ্ছে। এ পর্যন্ত তিন লাখের অধিক খতিয়ান ও ম্যাপ ডাকবিভাগের মাধ্যমে নাগরিকগণ হাতে পেয়েছেন। সম্প্রতি প্রবাসীদের জন্য এই সেবাটাও উন্মুক্ত করা হয়েছে। এটা প্রবাসীদের দীর্ঘ দিনের একটা দুশ্চিন্তাও ছিল। সেই দুশ্চিন্তাওদূর হয়ে গেলো –এই ডিজিটাল পদ্ধতিতে। পৃথিবীর ১৯২ টিদেশ থেকে কোন প্রবাসী সরাসরি ’কলসেন্টারে’, ‘ভূমিসেবা পোর্টাল’ অথবা ’ই-খতিয়ান এ্যাপ’ এর মাধ্যমে আবেদন করলে ডাক বিভাগ বিদেশে প্রবাসীগণের নিজ নিজ ঠিকানায় খতিয়ান পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহন করবে”।
বতমান সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জনবান্ধবনীতির ফলে সরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের ন্যায় বাংলাদেশ ডাক বিভাগ জনস্বাথকে প্রাধান্য দিয়ে এবং সেবার মনোভাব নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। অনাগত দিনগুলোতে “সেবাই আদশ” এই মহান ব্রতকে ধারন করে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ অগ্রগতির সোনালী ডানায় এগিয়ে যাবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে অগ্রণী ভুমিকা পালন করবে।
লেখকঃ
মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম, ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল, ফরিদপুর পোস্টাল বিভাগ।