এই কবিতাটির ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।
এই কবিতাটির ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু, নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘ডিসেম্বর ১৯৮১’। কবিতাটির ভাবার্থ এখনো সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। মানুষের মনের অভিব্যক্তি যেমন মানুষকে নিবিড় করে তোলে তাঁর অনুভূতির প্রতি।
Youtube
♠
নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘ডিসেম্বর ১৯৮১’
এই কবিতাটির ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।
হোক না সে ছন্দ-নক্সা-পাড়হীন বিধবার পরিধেয়
সাদা থান শাড়ি। না থাক এর অন্ত্যমিলের চাতুর্য,
কিম্বা অনুপ্রাসের সাঙ্গীতিক দোলা। না থাক এর বুকে
কোনো স্পর্শকাতর বিস্ফোরক বা বিষাক্ত স্প্লিন্টার বা সেই
আশ্চর্য ম্যাজিক যা কাম্য ছিলো কবিতার কাছে একদিন।
এই কবিতার মধ্যে নাগরিক জীবনের যন্ত্রণার কথা নেই,
নেই পরকীয়া প্রেমের নিষিদ্ধ আনন্দ, দ্বন্দ্ব, খাঁচার ভিতরের
অচিন পাখির আধ্যাত্মিকতা। নেই মরমী বাউল বা কোনো আত্মমগ্ন কবির মনোবৈকল্যের বিশ্লেষণ। এখানে রোমাঞ্চ নেই রহস্যোপন্যাসের অলৌকিক ঈশ্বরের প্রশস্তিগাথা বা সদ্যমৃত কোন প্রিয় বন্ধুর নির্জন কবরে সাজানোর যোগ্য এপিটাফ এটি নয়। কোনো প্রতীকী ব্যঞ্জনা নেই এখানে শব্দের, নেই বাক্যের অন্তরালে সূক্ষ্ম কোনো লুক্কায়িত বোধ।
তবু যখন বঙ্গোপসাগরের বুকে ঘনীভূত নিম্নচাপের
প্রভাবে আকাশ সূর্যহীন, বন্দরে বন্দরে বিপদ সংকেত,
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির ওপর যখন নেমে আসছে
অন্তহীন অন্ধকার; আমাদের স্বপ্নের চিত্রিত হরিণের গা থেকে যখন লাবণ্যময় চামড়া খুলে নিয়ে যাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী বুট-ব্যবসায়ীর দল, ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত দিয়ে লেখা সংবিধান যখন যথেচ্ছ হায়েনাদের নখরাঘাতে হচ্ছে ক্ষতবিক্ষত,
স্বাধীনতা বিরোধী মন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় শকটে যখন আমাদের
প্রাণের পতাকা অনিচ্ছুক উড়ছে বাতাসে,
যখন সাড়ে পাঁচ কোটি ভূমিহীন কৃষক চুয়ান্ন হাজার বর্গমাইলের মধ্যেও সাড়ে তিন হাত কবরের মাটি খুঁজে পাচ্ছে না।
নিবিড় পাটচাষের বদলে যখন অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে নিবিড় কোটিপতির চাষ, আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো টিভির পর্দায় যখন পাশ্চাত্যের হাঙর সংস্কৃতি এসে গিলে খাচ্ছে পদ্মার রূপালী ইলিশ
যখন আমাদের শত্রুরা সংঘবদ্ধ বন্ধুরা ঐক্যভ্রষ্ট-
তখন এই কবিতাটির ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।
ডিসেম্বর ১৯৮১
নির্মলেন্দু গুণ
আবৃত্তি – আব্দুল্লাহ আল হাদী,
ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর : রিফাত নোবেল,


এই কবিতাটির ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।



♠
Youtube link
Outbound link
