ইউরোপের যাত্রী
সুইজারল্যান্ডকে আমি প্রথম দেখি যশ চোপড়ার ক্যামেরায়। ছবির নাম দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে। ছবির মতো সুন্দর দেশটি দেখে প্রথম দর্শনেই মোহিত হয়ে পড়ি। এর পরে আরও অনেক বার দেখেছি তাকে সিনেমার পর্দায়। তবু দেশটির প্রতি মুগ্ধতা কমেনি একটুও।
পাহাড়, লেক, প্রাকৃতিক শোভা পরিবেষ্টিত সুইজারল্যান্ডের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে ট্রেনের বিকল্প নেই; কারণ, পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে ট্রেন এবং কেব্ল কারে চড়ে বাইরের প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্যাবলি উপভোগ করা, সে শিহরিত হওয়ার মতো ব্যাপার! আপনার কাছে তখন মনে হবে, এ কোন বিস্ময়কর দুনিয়ায় এসে পড়লাম! প্রতিটি বাড়ির একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, কাঠের দোতলা আর চারপাশে নামনা–জানা অসংখ্য ফুলে ভরা বাগানে ঘেরা। মনে হবে শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোনো ছবি, সৃষ্টিকর্তা যেন ঢেলে সাজিয়ে রেখেছেন।

পূর্ব ইউরোপের ছোট্ট সাজানো শহর জুরিখ। মুটামুটি কাছেই রাইন জলপ্রপাত। ইউরোপের সব থেকে বড় জলপ্রপাত। নদীর উজানের দিকে হাই রাইনে তার অবস্থান। সাড়ে ৪ শ‘ ফুট চওড়া আর ৭৫ ফুট উঁচু। ১৪থেকে ১৭ হাজার বছর আগে, শেষ বরফ যুগে এর জন্ম। জুরিখ থেকেট্রেনে ঘণ্টা খানেক লাগে। তার পর কিছুটা পায়ে হেঁটে পৌঁছলাম জলপ্রপাতের কাছে। অবাক করে দেয় এর ব্যাপ্তি। চার পাশের রঙিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।

দ্বিতীয় দিনে আমরা জুরিখ থেকে ইন্টারলাকেনের উদ্দেশে রওনা দিলাম। যাত্রা পথে পড়ে রাজধানী বার্ন। অন্যান্য দেশের রাজধানী শহরগুলির থেকে আলাদা এই শহর। রূপকথার মতো সুন্দর শহরটির ওল্ড টাউনটিকে ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ টাউন’-এর মর্যাদা দিয়েছে।পরিবার নিয়ে জীবনের কয়েকটি বছর এই শহরেই কাটিয়েছিলেন বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন। সেই বাড়িটি এখন মিউজিয়াম।

পুরো ইন্টারলেকেন ঘুরতে হলে ট্রেন জার্নির বিকল্প নেই; কারণ লেকের পাড় ঘেঁষে অসাধারণ কিছু দৃশ্য আছে, তা শুধু ট্রেন কিংবা প্লেন থেকেই উপভোগ করা সম্ভব। সড়কপথে গেলে এই স্বর্গীয় দৃশ্য উপভোগ করাযাবে কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম। এমনিতে ট্রেনের রাস্তাগুলো অনেক উঁচুতে থাকে যে ট্রেন থেকেই পুরো শহর দেখা যায়। এখানেই ট্রেন জার্নির সার্থকতা।

বার্ন ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম ইন্টারলাকেনের পথে। পাহাড় ঘেরা দু’টি হ্রদ— লেক থুন এবং লেক ব্রিয়ানজ। এর মাঝের উপত্যকাই হল ইন্টারলাকেন। প্রকৃতির কোলে এই উপত্যকার অপরূপ সৌন্দর্য সম্পর্কে যা বলা হবে, তা অবশ্যই কম। নীল পাহাড়ে ঘেরা হ্রদ। আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের মেলা। সবুজ মখমলের মাঠে ছোট ছোট ফুলের রঙিন নকশা। মাঝে সুন্দর সুন্দর কাঠের বাড়ি।

প্রায় সাড়ে তিন হাজার মিটার উচ্চতায় জাঙফ্রু ইউরোপের সব থেকে বড় রেলস্টেশন। আমরা ক্যাবল কার এবং ট্রেনে চেপে কখনও সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে, কখনও বা পাহাড়ের টানেলের মধ্যে দিয়ে পৌঁছলাম আল্পস পর্বতের চূড়ায় বলা মুশকিল। এর তুষার শুভ্র রূপ নির্বাক করেদেয়। রোদ ঝলমলে দিনে বরফ আর সূর্যরশ্মির যুগল বন্দিতে চোখ যাতেঝলসে না যায় তাই স্নো–গগলস পরতে হয়েছিল। বরফের ভাস্কর্যে সাজানো একটি হিমবাহ–গুহা রয়েছে এখানে। স্যুভেনির শপ ও খাবার রেস্তেরাও রয়েছে।

এখান থেকেই টিসর্টের এক্টা সুইস ঘড়ি কিনেছিলাম।শহরে জুরিখ লেকের পাড়ে প্রস্তুর যুগের সুইস ন্যাশনাল মিউজিয়ামটা এদের সংস্কৃতি জানার জন্য মোক্ষম প্লেস যা ১৮৯৮ সালে গুস্তভ গুল প্রতিষ্ঠা করেন।সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শহর জুরিখ ব্যয়বহুল বেশতাই খরচ কমাতে মেট্রো বা ডেইলি রেল পাস নিতে পারেন। শপিং মলহাউপ্টবানহফ খুবি বিশাল, এখানে সুইস চকোলেট, ঘড়ি সব পাবেন। প্যারিসের পথে এখন

জ্ঞানীরা বলেন একটি সভ্য উন্নত শহর দেখতে চাইলে প্যারিস ভ্রমণ কর। হাজার বছরের পুরোনো সাংস্কৃতিক শহর প্যারিস। পশ্চিম ইউরোপের রাজধানী নামে পরিচিত বাণিজ্যিক নগরী প্যারিসে এ বছর ঘুরে আসলাম । ব্রাসেলস হতে হাইস্পিড Italo ট্রেনে (উচ্চমানের এলুমিনিয়াম দ্বারা বগি নির্মিত বলে ওজনে খুব হালকা) সোয়া এক ঘন্টায় তিনশ পনেরো কিমি পথ পাড়ি দিয়ে চলে আসলাম প্যারিসগারুদা দ্যা নর্ড রেল স্টেশনে। ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত চমৎকার বিশাল এই রেল স্টেশন হতে ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসি হোটেলে তখন বিকেল ৭টার মত বাজে।

প্রচুর বাঙ্গালী এই স্টেশন এলাকায়, কেউ কেউ ট্যাক্সি চালায় তবে মিটার ছাড়া ট্যাক্সিওয়ালা যারা কিছুটা ফ্রড প্রকৃতির ভাড়া বেশি রাখে। বলে রাখি আমি ভ্রমণ করেছিলাম জুন মাসে এ সময় রাত ১০টার দিকে সূর্যাস্ত হত। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে আবার ট্যাক্সিতে বন্ধু তরিকুলকে সাথে নিয়ে চলে আসি আইফেল টাওয়ারে। অনলাইনে টিকেট আগেই কেটে রেখেছিলাম। ফ্রান্সে এরা ইংরেজি কম ইউজ করে মনে হল বেশির ভাগই ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত, যে কারনে আমরা সিটি বাসে যেতে পারেনি আর ক্রেডিট কার্ডের লিমিট সংক্রান্ত ঝামেলায় টিকিট করা যাচ্ছিল না, ইউরোপ অনেকটা ক্যাশলেস সোসাইটি।

পড়ন্ত বিকেলে চলে আসি আইফেল টাওয়ার। অনেকের জন্য স্বপ্নের জায়গা। ১০৫০ ফুট উঁচু লোহার তৈরি দৃস্টিন্দন স্থাপনা আইফেলের টপে উঠলাম দুই ধাপে। লিফটের এক্টা অংশ কার্ভেচার পথ ছিল। টপ থেকে পুরা প্যারিস শহর দেখা যায়, ৭৫ কিমি পর্যন্ত চোখে মুটামুটি পরিষ্কার দেখা যায়। সীন নদীর বুকে ভেসে চলছে ক্রুজ, রাস্তায় গাড়ি চলছে, অপূর্ব প্রকৃতি সব উপভোগ্য। প্যারিস শহর টা একেবারে ছবির মত সাজান গোছানো। টপে একটা রেস্তরাঁ আছে বার টাইপ। সারা বিশ্ব থেকেই দর্শনার্থী আসে এই আইফেল টাওয়ার দেখতে। উল্লেখ্য ১৮৮৯ সালে ১৮০৩৮ খন্ড লোহার টুকরো নির্মিত এ টাওয়ারে ট্রাসের নিখুত ডিজাইনের কারনে এখন পর্যন্ত এটা নিরাপদ আছে। ফ্রান্সের বিভিন্ন দিবসে এটা স্পেশাল লাইটিং করা হয়। আমরা সন্ধ্যার একটু আগে গিয়েছিলাম যেজন্য প্যারিস শহর দিন রাতে কেমন দুইটাই আইফেল হতে অবলোকন করতে পেরেছিলাম। নিচে নেমে আইফেল টাওয়ারের আলোকশয্যার খেলা দেখে চমকে গেলাম, অদ্ভুত সুন্দর লাখের উপর নানা রঙের বাতির খেলা। আইফেল টাওয়ার কিন্তু মধ্যযুগে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি ছিল। টাওয়ারের নিচে হকার টাইপ দোকানে কম দামে অনেক স্যুভেনির পাওয়া যায়।

পরদিন সকালে গেলাম জগৎ বিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়ামে। এটাকে বলা হয় পৃর্থিবীর বৃহত্তম শিল্পকলা জাদুঘর। এটার প্রদর্শনী এরিয়া ৮ লক্ষ বর্গফুট। এক সময় এখানে ফ্রান্সের রাজা ২য় ফিলিপ বসবাস করতেন পরবর্তীতে রাজা ষোড়শ লুই ভার্সাই নগরীতে বাসভবন স্থানান্তর করলে ১৭৯৩ সালে এটা জাদুঘর হিসেবে চালু হয়। এ জাদুঘরে প্রাচীন গ্রীক, রোমান, পারস্য, মিশরীয়, ইটালিয় ও ফ্রেঞ্চের প্রায় ৪০ হাজার শিল্পকর্ম(চিত্রশিল্প ও ভাস্কর্য) রয়েছে। ল্যুভর মিউজিয়ামে ভূগর্ভস্থ লবি দিয়ে প্রবেশ করতে হয়, এখানে টিকেট অনলাইন। ভূগর্ভস্থ লবিতে সূর্যের আলো এসে পড়ে খুবই ভাল লাগে। রেনেসাঁ যুগের চিত্রকর্ম দেখে অবাক হতে হয় এত নিখুঁত কারকার্য। মিউজিয়ামে স্যুভেনির শপ আছে বেশ সুন্দর জিনিস কিনতে পাওয়া যায়। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির ঐতিহাসিক ছবি মোনালিসা কে স্বচক্ষে দেখলাম। প্রতি বছর প্রায় ৮ কোটির উপর দর্শনার্থী এই মিউজিয়াম দেখতে আসে। পুরা মিউজিয়ামটি ইউরোপীয় স্থাপত্যে তৈরি অনেকগুলা ভবন এক সাথে সংযুক্ত। আয়তন ও সংগ্রহশালার দিক হতে ল্যুভর এত বড় মিউজিয়ামযে সারাদিন ঘুরলেও সব কিছু দেখে শেষ করা সম্ভব না। মিউজিয়ামের সামনে ওপেন স্পেস অনেক।

প্যারিসে ট্যুরিস্টদের জন্য হিপ হপ বাস আছে যাতে ডে ট্যুরে বিভিন্ন স্পট অনায়াসে ঘুরে দেখা যায়। শপিং এর জন্য আমরা অন্যতম বৃহত্তম নামকরা মল গ্যালারি লাফায়েত গেছিলাম; অত্যন্ত সুন্দর সাজানো গোছানো সুবিশাল মল, প্রায় সব ধরনের জিনিষই কিনতে পাওয়া যায়।প্যারিসে বিভিন্ন কোম্পানির পারফিউম আছে দামও কিছুটা বেশি, এছাড়া মেয়েদের কসমেটিক্স আছে উন্নত মানের ব্রান্ড। এই মলের রেস্টুরেন্টেই ভারতীয় খাবার খেলাম, ভাত সবজি মাছ। বেশির ভাগ সময়ে কেএফসি, ম্যাকডোনাল্ডস এ খেয়ে ইউরোপে থেকেছি। প্যারিসের সকালের স্পেশাল নাস্তা হল বাগেট আর চিজ। এরা প্রচুর চিজ খায়। কয়েক শত রকম চিজ আছে প্যারিসে আর বাগেট হল লম্বা রুটির কত খাবার। ফ্রান্সের বিজয় প্রতীক সম্রাট নেপোলিয়ন কতৃক নির্মিত আর্ক ডিট্র্যাম্পি গেট দেখলাম, এটা দারুন স্থাপত্যকলার নিদর্শন। পথে ঘাটে অসংখ্য দৃস্টিন্দন ভবন স্থাপনা চোখে পরল যার বর্ণনা দেয়া সম্ভব না। দূর থেকে নটরডেম গির্জা চোখে পড়ল, বাস্তিল দুর্গটা দেখা হল না।
প্যারিসে ইউনেস্কো সহ আন্তজার্তিক ১৫টির বেশি সংস্থার সদর দপ্তর। মুটামুটি ব্যয়বহুল শহর প্যারিস, রাস্তায় অলিগলিতে খাবারের রেস্তেরা আর শপিং সেন্টার। আসলে ইউরোপে খরচ করতে গেলে বাংলা টাকায় হিসাব করাটা বোকামি, ইউরো হিসেবে ভেবে খরচ করলেই আনন্দ দায়ক।স্বল্প সময়ে প্যারিস শহর দেখা হয়না ভাল করে এত বেশি ট্যুরিস্ট স্পট যারা আসবেন একটু সময় নিয়ে আসবেন।
Rome was not built in a day!! স্কুলে পড়তে এই বাক্যটার ট্রান্সলেশনকরা লাগত মনে পড়ে? সেই রোমান সাম্রাজ্যের কথা; পবিত্র কুরআনের সূরা রূম এ শহরটার উথান পতন বলা আছে।

আজকের রোম, রোমা , সর্বত্র তার অতীতের অনুস্মারক সঙ্গে একটি স্পন্দনশীল এবং প্রাণবন্ত শহর। দর্শক প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ সম্মুখীন, মধ্যযুগীয় এবং রেনেসাঁ ভবন এবং ঝরনা, এবং মহান যাদুঘর । রোম আধুনিক ইতালি রাজধানী এবং অনেক সূক্ষ্ম ক্যাফে, পিজা রেস্তোরাঁ, প্রাণবন্ত রাস্তা এবং স্কোয়ার দিয়ে সাজানো।

যদিও এটি একটি বিশাল শহর, ঐতিহাসিক কেন্দ্র মোটামুটি কম্প্যাক্ট। বুয়েটে থাকিতে যখন রোমান হলিডে মুভি দেখি তখন হতেই এ শহরের প্রতি মায়া জন্মে যায়। সেই রাজকন্যার রোম শহরের ভ্রমণের দৃশ্যচোখে ভেসে বেড়ায় শুধু….
পশ্চিমা সভ্যতার ইতিহাসে রোম একটি অবিচ্ছেদ্য নাম এবং নগরীর মূল আকর্ষণ হুবহু এটি রোমান উত্তরাধিকার যেখানে আপনি সর্বত্র সর্বত্র ধ্বংসস্তুপ এবং রেফারেন্সগুলি দেখে আসতে পারেন। তিন হাজার বছরের ইতিহাসের সাথে, এটি একটি দীর্ঘ পথ চলে গেছে যা রীতিনীতি এবং নগরীর প্রোফাইলে তার চিহ্ন রেখে গেছে। শহর বিশ্রামে টাইবার নদীর তীরে এবং এর অনেকগুলি সবুজ অঞ্চল, মৃদু পাহাড়, বন, স্রোত এবং হ্রদ রয়েছে। রোমের প্রাচীন হৃদয় সেভেন পাহাড়ে রয়েছে।

রোমান কলোসিয়াম পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যের একটি নির্দশন যেটা পূর্বে ফ্ল্যাভিয়ান অ্যামফি থিয়েটার হিসাবে পরিচিত ছিল এবং এটি ছিল পুরো রোমান সাম্রাজ্যের বৃহত্তম নির্মিত। প্রায় দুই হাজার বছর পুরনো, 188 মিটার দীর্ঘ, 57 মিটার উঁচু এবং 156 মিটার প্রশস্ত, ভেস্পাসিয়ানোর সরকারের অধীনে নির্মিত, সেই সময়ে এই অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে ৫০ হাজারেরও বেশি লোক এসেছিল গ্ল্যাডিয়েটার যুদ্ধ, ফাঁসি এবং বহিরাগত প্রাণী এবং বলা হয়, নৌ যুদ্ধের পুনরুত্পাদন।

রোমের একটি অবশ্য দর্শনীয় জায়গা ত্রেভি ফাউন্টেন। ১৭ শতকের মধ্যবর্তী সময়ের পৌরাণিক চরিত্র খচিত বারোক নকশা করা স্থাপত্যের একটি চমৎকার নিদর্শন এটি। সমুদ্রের দেবতা নেপচুন উঠে এসেছে পুকুরের মধ্য থেকে আর তার দুই পাশে বিশ্বাস ভাজন ট্রাইটনেরা। রাতেই এর সৌন্দর্য্য সবচেয়ে বেশি ফুটে ওঠে। কারণ রঙ্গিন বাতির আলো ফাউন্টেনের পানির ধারার সাথে মিশে পৌরাণিক আবহ তৈরি করে।রোমের অলিগলিতে বাঙ্গালী ভরপুর অনেকটা পুরান ঢাকার মত লাগে। মেট্রোতে খুব সহজেই পুরা শহর দর্শন করা যায়। বাঙ্গালি রেস্টুরেন্টে আছে কয়েক্টা। কলোসিয়ামে গিয়ে হাঠাৎ রাজবাড়ীর বড় ভাই ইকবাল ভায়ের সাথে দেখা আর কলিগরাতো সাথে ছিলই।

ইতালিতে এসে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম নগর রাষ্ট্র ভ্রমণের সুযোগটি হাতছাড়া করলাম না।টাইবার নদীর কূল ঘেঁষে ভ্যাটিকান সিটি অবস্থিত। এ নদীটি পুরো রোম নগরীর মাঝখান দিয়ে চলে গেছে। আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটি। এ দেশটি আসলে খ্রিস্টান ক্যাথলিকদের প্রধান তীর্থ স্থান। মাত্র ৪৯ হেক্টর আয়তনের এ ক্ষুদ্র দেশটিতে জনসংখ্যা কমবেশি ৮২৫ এর মতো। সিটির প্রবেশ মুখের একটু আগে হাতের বা দিকে বিখ্যাত চিত্রকর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির নামে ‘মিউজিও লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এক্সপেরিয়েন্স’ নামে একটি গ্যালারি চোখে পড়ল। রাস্তার দু’পাশে সারি সারি ভ্রাম্যমান দোকান বসিয়েছে বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা। তারা সেখানে বিভিন্ন সুভিনিয়র বিক্রি করছে। নগরীর প্রবেশমুখে দাঁড়ালে একটি বিশাল আকৃতির বিল্ডিং চোখে পড়ে। এটি হলো ‘সেন্ট পিটারস বাসিলিকা’, ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের অন্যতম তীর্থ স্থান।

দেশটি খুব ক্ষুদ্র হতে পারে, কিন্তু একটি স্বাধীন দেশে যা যা থাকা দরকার প্রায় সবকিছুই এদেশে আছে। আছে নিজস্ব পতাকা, মানচিত্র, নিজস্ব টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও। পৃথিবীর প্রায় ৪০টি ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় তাদের রেডিও থেকে ধর্মীয় বাণী প্রচার করা হয়। ভ্যাটিকান সিটিতে রয়েছে সুন্দর একটি গার্ডেন। সবুজের মাঝে বিভিন্ন রঙের ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে বাগানে। দর্শনার্থীরা বসে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় আর ভ্যাটিকানের বিখ্যাত মিউজিয়ামে রয়েছে ইতালিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন চিত্রকরের আঁকা ছবি, বিভিন্ন ধরনের ভাস্কর্য, ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মের ইতিহাস ও ঐতিহ্যসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম, নিঃসন্দেহে আপনার ভালো লাগবে এটি ঘুরে দেখতে।
নেপলস ইতালির একটি ছোট্র শহর, এখানেই আমরা লিফট ফ্যাক্টরি ভিজিট করি। এটার পশ্চিম উপকূলে ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি অংশের নাম আমালফি কোস্ট। স্থানীয় নাম ‘কোস্তিয়েরাআমালফিতানা’। প্রতি গ্রীষ্মে এখানে টুরিস্ট আসেন পরিবেশ, আতিথেয়তা ও ‘লেমন লিকার’-এর স্বাদ নিতে। এ উপকূল নিঃসন্দেহেই তালির সেরা পর্যটক মুক্তাগুলির মধ্যে একটি। এটি টাইরেন সাগরে ইতালীয় উপকূলের একটি প্রসারিত অথবা, ডানদিকে সালেরনো উপসাগরে, সুন্দর ক্যাম্পানিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। এ শহরের আশপাশের পাহাড়িতে লেবুর চাষ হয়। এই বিশেষ ধরনের লেবুর বিশেষত্ব হল, এর খোসায় উচ্চমানের তেল পাওয়া যায়। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো আমালফি উপকূলকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বলে ঘোষণা করেছে।
নেপলস এর খুব কাছেই পৃথিবীর প্রাচীনতম অভিজাত জনপদগুলোর একটি ছিল এই পম্পেই নগরী। সে সময় প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি ছিল নগরটি। এটি ছিল দুই হাজার বছরের পুরনো একটি অভিজাত শহর। ইতালির তৎকালীন রাজা ওসকান খ্রিস্টপূর্ব ছয় থেকে সাত শতাব্দীর দিকে এই শহরের গোড়াপত্তন করেন। ক্রমান্বয়ে সেটি হয়ে ওঠে সমকালীন বিশ্বের অন্যতম বিত্ত-বৈভব আর অভিজাত নগরী। রোমান আর গ্রিক বণিকদের ব্যবসা-বাণিজ্যের মূলকেন্দ্রে পরিণত হয় এই শহর। ভূমধ্যসাগরের উপত্যকায় ভিসুভিয়াস পাহাড়ের পাদদেশে নেপলস শহরের পাশেই গড়ে উঠেছিল শহরটি। শহরটি বাণিজ্য নগরীর পাশাপাশি ধীরে ধীরে সারা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম বিনোদন নগরীর মর্যাদাও অর্জন করতে সক্ষম হয়। ধর্মীয় চিন্তা-চেতনায় উজ্জীবিত ইউরোপের কনজারভেটিভ ধর্মীয় সম্প্রদায় পম্পেই শহর পরিভ্রমণ থেকে বিমুখ হতে শুরু করে। এমনই এক অমানবিক, ঘৃণ্যতমও বর্বরোচিত সমাজব্যবস্থা যখন সেখানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল, তখনই নেমে এলো মহান স্রষ্টার ক্রোধের আগুন। ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুযায়ী, শহরের পাশে অবস্থিত ভিসুভিয়াস পর্বতের আগ্নেয়গিরিতে শুরু হয় বিরাট ধরনের অগ্ন্যুৎপাত, যাতে পম্পেই শহরসহ শহরের দুই লাখ অধিবাসী দিনদুপুরে মাত্র অল্প কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে অন্তত ৭৫ফুট অগ্নির লাভা আর ছাইভস্মের নিচে বিলীন হয়ে যায়। ব্যভিচার, সমকামিতা ও পতিতাবৃত্তির কারণে অতীতে বহু জাতি ধ্বংস হয়েছে। কিছুজাতির বিবরণ কোরআন ও হাদিসে রয়েছে।
খুব স্বল্প সময়ে আসলে ইউরো ট্যুর হয়না, সময়ের অভাবে ভেনিস নগরী, মিলান শহরে, বোরঘেস গ্যালারি, প্যান্থয়িন গির্জা, পিসার হেলান মন্দিরদেখা সম্ভব হয়নি হয়ত আবার কখনো গেলে দেখার চেস্টা করব। সারা পৃথিবী এত সুন্দরভাবে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন যতদিন বাঁচব ততদিন ঘুরে দেখার অভিযান অব্যাহত থাকবে। সৌন্দর্যের হাতছানি আমায় ডাকে……..

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন
নির্বাহী প্রকৌশলী
গণপূর্ত বিভাগ, দিনাজপুর